আরবি ১২ মাসে এক বছর। আরবি এক বছর সময় ৩৬৫ দিন। প্রতিবছর আল্লাহর প্রিয়
বান্দা এই রজব মাসটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। কারণ রজব মাসে বিশেষ কিছু সওয়াব
রয়েছে। অন্যান্য মাসে তুলনায় মহান আল্লাহর কাছে মাসের ইবাদত বেশি
পছন্দের।
ইসলামে দৃষ্টিতে এই জিলহজ মাসকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা দেওয়া হয়। আপনারা
যারা আমাদের আজকের আর্টিকেল পড়ছেন। এবং রজব মাসের কত তারিখ আজ ২০২৩ জানতে চান।
তাদের সুবিধার্থে রজব মাসের কত তারিখ এ বিষয়ে জানানো হলো।
আরবি সকল মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল। আরবি ক্যালেন্ডার ১৪৪৫ হিজরী রজব মাসের
১ তারিখ শুরু হবে। ইংরেজি ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ। বাংলা ১৪৩০
সালের মাঘ মাসের ২ তারিখ। রোজ সোমবার " মুসলিম রীতি অনুযায়ী চাঁদ দেখার উপর
নির্ভরশীল"।
পাঠক বন্ধুরা আপনাদের সুবিধার্থে নিচে রজব মাসের ক্যালেন্ডার দেয়া হলো। রজব
মাসের ক্যালেন্ডার দেখলে আপনি সব বিষয়ে বিস্তারিত নিজেই জানতে পারবেন। যদি কেউ
রজব মাস নিয়ে আপনাকে কোন প্রশ্ন করে থাকে তাহলে আপনি তার প্রশ্নের উত্তর দিতে
পারবেন।
রজব রবি চান্দ্র বছরের সপ্তম মাস। রজব মাসের পুরো নাম 'আর রজব আল মুরাজ্জাব'
বা 'রজবুল মুরাজ্জাব'। 'রজব' অর্থ 'মহান', 'প্রচুর', 'মহান'। 'মুরাজ্জাব'
অর্থ 'সম্মানিত'; 'রজবে মুরাজ্জাব' অর্থ 'প্রচুর সম্মানিত মাস'। রজব হারাম,
সম্মানিত ও নিষিদ্ধ মাসগুলোর একটি। চার মাসকে হারাম মাস হিসেবে গণ্য করা হয়।
এগুলো হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, 'আল্লাহ যেদিন আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন
থেকে বছর বারো মাস। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত; তিনটি হল জিলকদ, জিলহজ এবং
মহররম এবং চতুর্থটি হল "রজব মুদার", যা জুমাদাল উখরা এবং শাবান মাসের মধ্যে।'
(মুসলিম)।
'মুদার' হল দুই বা একাধিক সুবিধার সমন্বয়। রজব ও শাবান যমজ মাস। রজব ও শাবান
মাসকে একত্রে রজবান বা রজবইন অর্থাৎ রজব বলা হয়। রমজানের আগের এই দুই মাস
আমল ও সাধনার জন্য খুবই উপকারী এবং বিশেষ করে উর্বর।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রজব ও শা'বান মাসে এই দোয়াটি প্রচুর পাঠ করতেন,
'আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজব ওয়া শা'বান, ওয়া বাল্লিগ না রমজান'। অর্থ,
'হে ঈশ্বর! আমাদের রজব মাস এবং শাবান মাসে বরকত দান করুন; আমাদেরকে রমজান মাস
দান করুন।' (বুখারী ও মুসলিম)।
উম্মে সালমা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) শা’বান মাসে সবচেয়ে বেশি রোজা
রাখতেন, এরপর রজব মাসে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘রজব মাস এলে আমরা
রাসূল (সা.)-এর আমলের আধিক্য দেখে তা বুঝতে পারতাম৷’ কোনো কোনো বর্ণনায়
এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মাসে ১০টি রোজা পালন করতেন। রজব মাসে এবং শা'বান
মাসে। তিনি ২০টি রোজা রেখেছেন; তিনি রমজান মাসে ৩০টি রোজা রাখতেন। (দারিমি)।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, 'রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার (রাসূলের) মাস;
রমজান আমার উম্মতের মাস।' (তিরমিযী)। 'যে ব্যক্তি রজব মাসে (ইবাদতের মাধ্যমে)
ক্ষেত চাষ করেনি এবং শা'বান মাসে (ইবাদতের মাধ্যমে) ক্ষেতে আগাছা দেয়নি; সে
রমজান মাসে (ইবাদতের) ফসল কাটাতে পারবে না।' (বায়হাকী)।
রজব মাসের বিশেষ আমল হলো বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। বিশেষ করে প্রতি সোমবার,
বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এবং মাসের 1, 10; 13, 14, 15; 20, 29, 30 তারিখে
উপবাস। বেশি বেশি নফল নামাজ পড়ুন। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত-দোহা,
জাওয়াল, আওয়াবিন; তাহিয়াতুল ওযু, দুখুলুল মসজিদ ইত্যাদি করা।
এ মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা; কুরআন
তেলাওয়াত শেখানো এবং শেখানো; সহীহ-শুদ্ধ তাদের জন্য যারা অর্থ সহ জানেন এবং
শিখেন।
হজরত সালমান ফারসী (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রজব মাসের প্রথম দিনে ১০ রাকাত নফল
নামাজ পড়তে হয়। হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
চারটি মহান রাত হলো: রজব মাসের প্রথম রাত, শা'বান মাসের মধ্য দিনের রাত (শবা
বরাত)। ), শাওয়াল মাসের প্রথম রাত (ঈদ আল-ফিতর বা রমজানের ঈদের রাত), জিলহজ
মাসের দশম রাত (ঈদুল-আযহা বা কোরবানির রাত)।
রজব ও শাবান মাস রমজান মাসের প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতি শারীরিক, মানসিক,
আর্থিক অর্থাৎ সামগ্রিক বা সামগ্রিক। যেহেতু রমজান মাসে ইবাদতের সময়সূচী
পরিবর্তন হবে, সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন এবং রমজান মাসের শেষ
দশকে ইতিকাফের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, তাই আগে থেকেই
প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।
রজব ও শাবান মাসে নেক আমল ও গুনাহ পরিহার করে রমজানের প্রস্তুতি নিতে হবে।
তওবা ও ক্ষমা করতে হবে। মোহ ও পাপ এড়ানোর ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সমাজের
উচিত একে অপরকে ভালো কাজের আদেশ করা এবং খারাপ কাজে নিষেধ করা।
রমজান মাসে ইবাদত-বন্দেগীর পরিবেশ রক্ষায় সতর্ক থাকতে হবে। শ্রমিকদের কাজের
চাপ কমাতে হবে। দানের পরিমাণ বাড়াতে হবে। রমজানে গরিব মানুষ যাতে ভালোভাবে
সাহরি ও ইফতার খেতে পারে তাও নিশ্চিত করতে হবে। রজব শাবান মাসে এসব বিষয়ে
পরিকল্পনা করা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়।